আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী না দিলেও দলটির সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতারা নিজেদের নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের প্রার্থী করছেন। অন্তত ১৪টি উপজেলায় এ ধরনের তৎপরতা দেখা গেছে। এর মধ্যে একজন প্রতিমন্ত্রী ও ১২ সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হচ্ছেন।
এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে চারটি ধাপে। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ১৫২টি উপজেলায় এবং দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে ১৬১টি উপজেলায় ভোট হবে। আগে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ছিল নির্দলীয়।
২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ক্ষমতাসীনেরা দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে এবার নির্বাচন হচ্ছে অনেকটা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।বিএনপি ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করায় ওই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাতে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিরোধ তৈরি হয়েছিল। এর মাস তিনেকের মাথায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের পছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় বিরোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাহাদারা মান্নান। এই দুই উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দিতে সাহাদারা মান্নান তাঁর ছেলে সাখাওয়াত হোসেনকে এবং সোনাতলায় ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এই ঘোষণায় স্থানীয় নেতাদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ।
সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সাহাদারা মান্নান নিজেই সংসদ সদস্য। দলের বিভিন্ন কমিটিতে তাঁর স্বজনদের পদ দিয়েছেন। এখন ছেলেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দলীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাহাদারা মান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
নাটোরের সিংড়া উপজেলায় লুৎফুল হাবীবকে (রুবেল) ‘একক প্রার্থী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের শ্যালক। দলীয় সূত্র জানায়, এখানে লুৎফুলসহ তিনজন নির্বাচনে দাঁড়াতে ইচ্ছুক ছিলেন। গত শুক্রবার প্রতিমন্ত্রীর ঢাকার বাসায় স্থানীয় নেতাদের কয়েকজন বৈঠক করেন। সেখানে লুৎফুলকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ভোটকে কেন্দ্র করে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে অন্য প্রার্থীরা ভোট করতে না চাওয়ায় লুৎফুল হাবীবকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার দলীয় প্রার্থী মনোনীত করার সুযোগ নেই। প্রতিমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করে একক প্রার্থী করা হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। তবে এটা করা হলে নৈতিকতার দিক থেকে ঠিক হয়নি।
মাদারীপুর সদর উপজেলায় নিজের ছেলে মো. আসিবুর রহমান খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজাহান খান। আসিবুর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ছেলে সাদাত মান্নান চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন। এম এ মান্নান নিজেও বিভিন্ন আয়োজনে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা এবারও প্রার্থী। তাঁর বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগেরসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। একই উপজেলায় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে যুবলীগের নেতা ফজলে রাব্বী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে প্রচার চালাচ্ছেন।