এস এম রাহাত হোসেন ফারুক, রাজবাড়ী প্রতিনিধিঃ অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি বিভিন্ন পএিকায় ও অনলাইন মিডিয়ায় নিউজ হওয়ার পর, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। অতিরিক্ত মুল্যে সার বিক্রি করার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে।
শুক্রবার বিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এস,এম আবু দারদা বালিয়াকান্দি উপজেলায় নবাবপুর ইউনিয়নের বেরুলি বাজার, তালতলা বাজার, নারুয়া ইউনিয়নের নারুয়া বাজার ও বিভিন্ন সারের দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অভিযানে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রয়, দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা এবং লাইসেন্স ছাড়া সার বিক্রয়ের অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬ এর বিভিন্ন ধারায় তালেব সরদার (সাগর এন্টারপ্রাইজ), মোঃ ছেকেন মন্ডল (জাহিদ স্টোর), মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন (জিহাদ কৃষি ভান্ডার) ও মোঃ রবিউল ইসলাম (রাজিব স্টোর) মোট চারজন সার ব্যবসায়ীকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় অন্যান্য বাজারে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত মূল্যের অধিক দামে সার বিক্রয় না করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতা করেন বালিয়াকান্দি থানা পুলিশের সদস্যবৃন্দ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানাগেছে, উপজেলার ৯জন বিসিআইসি সার ডিলার একেএম আমিরুল ইসলামের মেসার্স সোহাগ এন্টার প্রাইজ ৫ মেট্রিকটন, একেএম ফরিদ হোসেন বাবুর মেসার্স ফরিদ হোসেন ১৫ মেট্রিকটন, তরুন কুমার সাহার সাহা ট্রেডার্স ১০.১৫ মেট্রিকটন, কাজী গোলাম মোহাম্মদের মেসার্স জনতা ট্রেডার্স ২০ মেট্রিকটন, জয়নুদ্দিন মৃধার মেসার্স মৃধা ষ্টোর ২১.৫ মেট্রিকটন, অনিল কুমার সরকারের মেসার্স অনিল সরকার ১.৪০ মেট্রিকটন, সাইফুজ্জামান চুন্নুর মেসার্স জাহিদ ট্রেডার্স ২৫ মেট্রিকটন, কানাই লাল শিকদারের মেসার্স কানাই লাল শিকদার ১৯.৯৫ মেট্রিকটন, সুজিত কুমার সাহার মেসার্স সুজিত কুমার সাহা ৩১.২০ মেট্রিকটন ও ৫জন বিএডিসি সার ডিলার নটাপাড়ার ইন্তাজ ৩.৫০ মেট্রিকটন, প্রহল্লাদ কুমার সাহা ১২.৪৫ মেট্রিকটন, ভাই ভাই এন্টার প্রাইজ ১০.৮৫, সেলিনা বীজ ভান্ডার ৫.১৫ মেট্রিকটন, মুন্নাফ ট্রেডার্স ১২.০২ মেট্রিকটনসহ পেয়েছেন ১৯৩.১৫ মেট্রিকটন বাংলা ডিএপি সারের ভর্তুকীর ১৭লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা ।
উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বশির আহম্মেদ মিনু ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক হোসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ ইসলামপুর ইউনিয়নে ২জন ডিলার মেসার্স অনিল সরকার ও মেসার্স জাহিদ ট্রেডার্স সার বিক্রির কথা থাকলেও তারা সার বিক্রি করেন অন্য ইউনিয়ন বহরপুর বাজারে।
উপজেলার নারুয়া বাজারে বিভিন্ন সারের দোকানে সার ক্রয় করতে গিয়ে দেখাযায়, ৮শত টাকার ডিএপি ১হাজার ৪শত ৫০ টাকা, ১হাজার ১শত টাকার টিএসপি ১হাজার ৭শত ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে পটাশ ও ইউরিয়া সারের সরকারী নির্ধারিত মুল্যে বিক্রি করা হলেও এ অঞ্চলে নিষিদ্ধ সার বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবী এ অঞ্চলের কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া বাইরে থেকে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। বিসিআইসি সার ডিলারের ঘরে গিয়েও একই চিত্র দেখাযায়। সাংবাদিক টের পেয়ে সার ক্রেতাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
শতাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানাযায়, সরকারী মুল্যে আমরা বুঝি না। কোন দোকানে মুল্যে তালিকা টাঙানো নেই। যার কাছ থেকে যে ভাবে পারছে মুল্যে হাকিয়ে নিচ্ছে। আমাদেরকে কোন কৃষি বিভাগ থেকে কোন পরামর্শ বা সারের মুল্যে জানানো হয়না।
উপজেলা খুচরা সার বিক্রেতা ডিলার সমিতির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম গত ২৮ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন,বালিয়াকান্দি উপজেলার ৬৩জন খুচরা সারের ডিলার আমাদের মধ্যে সরকারী মূল্যে সার বিক্রি করার কথা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে আমাদের মধ্যে সার বিক্রি করে না। তারা লাইসেন্স বিহীন অবৈধ সার ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্চ মূল্যে অবৈধ ভাবে সার বিক্রি করে। চলতি মাসে ৯৮৫ বস্তা সার বরাদ্দ থাকা সত্বেও ও বালিয়াকান্দি উপজেলার কোন কৃষকরা সঠিকভাবে এই সার পায়নি। উপজেলা কৃষি অফিসারের নিকট কথাগুলো বলা হলেও কৃষি অফিসার এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এবং কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
নাম না প্রকাশের শর্তে একজন ডিলার বলেন, আমিসহ সকল ডিলারের নিকট থেকেই ভর্তুকীর সারে কেজি প্রতি ১টাকা করে কৃষি অফিসারকে দিতে হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেশি টাকা নেওয়ার কথা নয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিষয়টি দেখা হবে। প্রতিকেজি ১টাকা করে স্টাফরা নিতে পারে ভর্তুকীর সারে, এটা আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।