ডেস্ক নিউজ:
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীদের জিম্মি করে চলছে অ্যাম্বুলেন্সের রমরমা বাণিজ্য।
গত কয়েক বছর ধরে এই হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলো বিকল দেখিয়ে অকেজো মাইক্রোবাস কেটে তাতে জরুরি লাল লাইট আর একটি সিলিন্ডার বসিয়ে শতাধিক এ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে জমজমাট ব্যবসা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। পাশপাশি রোগীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এ হাসপাতালে আগের ২টি এম্বুলেন্সের সঙ্গে আরও একটি নতুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এম্বুলেন্স দেয়া হয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এ হাসপাতালের রোগীদের জন্য দেয়া সরকারি তিনটি এম্বুলেন্স বিকল করে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক ওসমান সর্দার নিজের চারটি অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রায় শতাধিক এম্বুলেন্স নামিয়ে জমজমাট ব্যবসা চালাচ্ছেন।
মুমূর্ষু রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে মাইক্রোবাস কেটে তাতে জরুরি লাল আলো আর একটি সিলিন্ডার বসিয়ে এ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে এ রমরমা বাণিজ্য চালানো হচ্ছে। এদিকে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের অভাবে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে রোগীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী পূর্বপশ্চিমকে জানান, সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা ধার্য করা আছে। তাতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া বাবদ ৫ হাজার ২ শ টাকা ও রাজশাহীতে ২ হাজার ৫শ টাকা নির্ধারিত। তবে গত ছয় বছর ধরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকায় রোগী প্রতি ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া আসা-যাওয়ার জন্য ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং রাজশাহীর জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আদায় করছেন এখানকার বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা। কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক ওসমান সর্দার নিজেও একজন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে চালক ওসমান সর্দার পূর্বপশ্চিমকে বলেন, মেরামতের জন্য বছরে যে টাকা বরাদ্দ রয়েছে তা তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য যথেষ্ট নয়। যদি কর্তৃপক্ষ মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যয় বহন করে তাহলে অ্যাম্বুলেন্সগুলো সচল থাকবে।
এদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আন্তঃবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন রোগী ভর্তি হয়। অন্যদিকে বহির্বিভাগে দৈনিক প্রায় একহাজার রোগী চিকিৎসা নেন। আর এখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন ১০-১৫ জনকে ঢাকা ও রাজশাহীতে রেফার করা হয়। হাসপাতালে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি কোনোভাবে চলে। আর একটির চালককে জিজ্ঞেস করলেই বলেন বিকল।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার পাল জানান, হাসপাতলে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দুইটি সচল আর একটি বিকল। তবে এই অ্যাম্বুলেন্সগুলো দূরে পাঠানো সম্ভব হয় না।
এদিকে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের জন্য যে ব্যয় তার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালক ওসমান সর্দারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কথা স্বীকার করে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এদিকে ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুমূর্ষু রোগীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। প্রতিদিনই মুমূর্ষু রোগী নিয়ে স্বজনদের দৌড়-ঝাপ করতে দেখা যায়। অথচ এ হাসপাতালে সরকারি অর্থে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্ত্বেও তা বিকল দেখিয়ে চালক নিজেই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায় নেমেছেন। জরুরি ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটি স্বাভাবিক করার দাবি ভুক্তভোগীদের।