কুমারখালি প্রতিনিধিঃbbccrimenews:- কুষ্টিয়ার কুমারখালী শহরের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ীত্বে রুপ নিয়েছে। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা থাকলেও নিরসন হচ্ছেনা। ফলে জনদূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ, বাসাবাড়ী ও মার্কেট নির্মাণ, কালভার্ট ও ড্রেন বন্দ করে ফেলা এবং নির্মিত ড্রেন দিয়ে পানি নিস্কাশন না হওয়াসহ প্রভৃতি কারনে এই জলাবদ্ধতা বিরাজমান রয়েছে। দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ বার বার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছেনা। তারা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদের চারপাশে এই জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। তাছাড়া দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ এখন নর্দমায় পরিনত হয়েছে। স্বয়ং উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে পশ্চিমপাড়ায় যাতায়াতের রাস্তায় এখন হাটু সমান পানি। সেখানে চলাচলকারীদের ভোগান্তির শেষ নেই। উপজেলা পরিষদের ভেতরের পুকুরের পানিও বর্তমানে ফুলকুঁড়ি স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা মসজিদের পাশের ডোবা মশার উর্বর জন্মস্থান। জানা যায়, এক সময় অত্র এলাকার বৃষ্টির পানি মহিলা কলেজের সামনের ড্রেন দিয়ে দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের কালভার্টের মাধ্যমে বিলে গিয়ে পড়তো। এর পর গড়ের মাঠের লোহার ব্রীজ ও দূর্গাপুর মন্দিরের পাশের সাঁকো দিয়ে বেরিয়ে হাসিমপুর খাল ও রেলের খালের মাধ্যমে গড়াই নদীতে চলে যেত। কিন্তু দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের কালভার্ট বন্দ করা, নতুন সড়ক নির্মাণ, পৌর ড্রেন ভরাট ও ভেঙ্গে যাওয়া, কুমারখালী সরকারী কলেজের মার্কেট নির্মান করার জন্য ষ্টেশনের পূর্বপাশের রেল সেতুর মুখ বন্দ করা, মাছ চাষের জন্য কয়েকটি পুকুরে নতুন করে পাড় বাঁধা, কয়েকটি পাকা বাড়ী নির্মাণ এবং কাজীপাড়া রেলগেট দিয়ে পৌরসভার নতুন ড্রেনের মাধ্যমে পানি বের না হওয়ার কারনে দীর্ঘস্থায়ী এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ইতি টাওয়ারের পিছনের পুকুরগুলো বর্তমানে পানিতে একাকার। উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে দূর্গাপুরের উত্তরপাড়ার একমাত্র সড়কটি পানির নিচে পড়ে আছে বর্ষা মওসুম শুরুর পর থেকেই। বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আদিবাসী বুনো পাড়ার অনেক বসত ঘরে বর্তমানে পানি ঢুকেছে। জলামগ্ন অবস্থায় রয়েছে পাড়াটি। হাসপাতালের সামনে বিশাল ডোবায় পানি থৈ থৈ। জে এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশেও জলাবদ্ধতা নতুন নয়। কয়েক বছর পূর্বে পৌর কর্তৃপক্ষ এই এলাকার পানি নিস্কাশনের জন্য দূর্গাপুর রেলগেট ভায়া কুন্ডুপাড়ার মধ্যদিয়ে একটি ড্রেন নির্মান করেছিল। কিন্ত সেটা জলাবদ্ধতার স্তর থেকে বেশি উঁচু হওয়ায় পানি নিস্কাশনে কাজে লাগেনি। উল্টো ড্রেনের পানিই ঢুকে পড়ে। জলাবদ্ধতায় জর্জরিত ব্যক্তিদের প্রশ্ন- তাহলে এই দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা শেষ কোথায় ? জলাবদ্ধতার ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা সড়কের বাসিন্দা বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক ডাঃ আব্দুর রশীদ বিশ^াস জানান, বাসার চারপাশেই দীর্ঘদিন পানি জমে থেকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অনেকের যাতায়াতের ভোগান্তি এখন চরমে। তিনি আরো বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চোখের সামনে এমন জলাবদ্ধতা সত্যিই আশ্চর্য্যর বিষয়! বৃষ্টি হলে আরো ভোগান্তি বৃদ্ধি হয় বলেও তিনি মতামত দেন। দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সমাজসেবক দ্বীন মোহাম্মদ মন্টু দুঃখের সাথে জানান, পৌরসভা প্রচুর টাকা খরচ করে ড্রেন নির্মাণ করলেও সেটা কাজে আসছেনা। মাঠে জলাবদ্ধতা থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্রীড়াচর্চা বন্দ। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ না করে, উপকার হয় সেই প্রকল্প গ্রহন করা দরকার। কুমারখালী পৌর মেয়র মোঃ শামসুজ্জামান অরুন এব্যাপারে দৈনিক সংগ্রাম ও দৈনিক বর্তমান সময়কে জানান, অত্র এলাকার পানি নিস্কাশনের জন্য আমরা ড্রেন নির্মাণ করলেও জলাবদ্ধতা নিরশনে সেটা ব্যর্থ হয়েছে ঠিক, তবে আবার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছে। তিনি জানান, জলাবদ্ধতা দুর করতে শহরের ভেতরের বড় ড্রেন ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু বড় ড্রেনে সংযোগ স্থাপন করতে হলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক প্রধান বাধা। উক্ত সড়কের নিচ দিয়ে পানি বের করার ব্যবস্থা করার সক্ষমতা পৌরসভার নেই। পৌর মেয়র বলেন, কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কে একটি সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ করার বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রাচীন কুমারখালী পৌরসভা এলাকার উপজেলা পরিষদের চারপাশের এই জলাবদ্ধতা সমস্যা, জনদূর্ভোগ দ্রুত নিরসন হোক এমনটিই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।