ঢাকার কেরানীগঞ্জে কোন্ডা ইউনিয়নে বাক্তারচর গ্রামে শাহিনূর বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে আজ রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে মারা যান তিনি। ঘটনার পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে। তবে নিহতের ভাইয়ের দাবী, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সরেজমিন রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়ি খালি, সবগুলো রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরিবারের কোনো লোকজন না পাওয়ায় আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১২-১৩ বছর আগে নজরুল ইসলাম ভুট্টুর সাথে শাহিনূরের বিয়ে হয়। ভুট্টু দীর্ঘদিন যাবৎ কুয়েত প্রবাসী ছিলো। গত মার্চ মাসে তিনি দেশে চলে আসেন। ভুট্টুর মা বানু বেগমের সাথে স্ত্রী শাহিনূরের কখোনোই ভালো সম্পর্ক ছিলো না।
গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় কয়েকজন মিলে তাদের বাড়িতে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে বানু বেগমের জমি বিক্রি করা টাকা সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় বানু বেগমকে একমাস করে প্রত্যেক সন্তানের কাছে থাকবেন খাবেন বলেও শর্ত দেওয়া হয়। তবে এই শর্ত মেনে নেয়নি শাহিনূর বেগম। তিনি তখন বলেন, ‘তার টাকার দরকার নেই, প্রয়োজনে আত্মহত্যা করবে তাও শাশুড়ি বানু বেগমকে এক মাস করে খাওয়াবেন না।’ এ কথা শোনার পরে ভুট্টু সবার সামনে শাহিনূরকে চর থাপ্পড় মারে এবং ঘড়ে চলে যেতে বলে।
শাহিনূর সাথে সাথে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে তার ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এসে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় শাহিনূরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে রবিবার সন্ধ্যায় শাহিনূর মারা যান।
এদিকে শাহিনূরের মৃত্যুতে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে তার স্বজনরা। শাহিনূরের ভাই মো. কাসেম বলেন, তার ভগ্নিপতি ভুট্টু একজন জুয়াড়ী। কুয়েতে জুয়া খেলে সব নষ্ট করে দেশে এসেছে। দেশে আশার পরে জুয়া খেলার টাকার জন্য তার বোনকে নিয়মিত চাপ দিতো। এ পর্যন্ত কয়েকবার টাকা জোগাড় করে দেয়াও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আরো টাকা চাইতে থাকে ভুট্টু। টাকা দিতে না পারায় কথা কাটাকাটির জেড়ে গত বুধবার ভুট্টু নিজে শাহিনূরের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে আশে পাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার বোন তিন দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলো, এক বারের জন্য শশুরবাড়ির কেউ হাসপাতালে দেখতে যায়নি। এ ঘটনার জন্য সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন নিহতের পরিবার।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান বলেন, মৃত্যুর ঘটনাটি নিহতের স্বজনা আমাদের অবহিত করেছে। লাশ দাফনের পরে তারা থানায় এসে মামলা দায়ের করবে।