ফারহানা নওশিন তিতলী, ইবিঃ সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো কবে এবং কিভাবে খুলবে তা নিয়ে বছর পেরোলেও সন্দিহান শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরাও। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সশরীরে ও অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরীক্ষা নিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি। ইউজিসি নির্দেশনা দেওয়ার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার তারিখ ঘোষণা করলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত এমন কোন নির্দেশনা পায়নি বলে জানা গেছে। বিগত সময়ে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা দ্রুততম সময়ে পোষাতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুতে বিলম্বিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসি হতে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুষদ সমূহে বিভাগগুলোর পরামর্শ জানতে চিঠি পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো একাডেমিক মিটিং সম্পন্ন করেছে। সেইসাথে বিভাগ জানিয়েছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী সশরীরে এবং দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্যামলী তানজিন অনু বলেন, করোনা আমায় মূর্খ করলো, মস্তিষ্কে ফেললো জং। পড়াশোনা প্রায় বাদ হয়ে গেছে, নামেমাত্র ধরে আছি শিক্ষার্থীর ভং। যা দু একটা ক্লাস অনলাইনে হয় তা আর বুঝতে পারিনা, কানেক্ট হতেও পোহাতে হয় নানা ঝামেলা। এর মাঝে আবার সিদ্ধান্ত এলো অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার! একেই কি বলে প্রহসন? যাইহোক অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে সিজিপিএ পরিবর্তন হওয়া ছাড়া কোনো লাভ হবে বলে মনে করিনা। বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক সার্ভিস ৪জি, ৫জি হলেও স্পিড ২জিও পাওয়া যায় না। গ্রামের দিকে তো নেটওয়ার্কের অবস্থা শোচনীয়। ৪৫ মিনিটের এক ক্লাসে ৩ বার ডিসকানেক্ট হতে হয়। আবার অনেকে শুধু এটেন্ডেন্সির মার্কের জন্য ক্লাসে কানেক্ট হয়। যাদের পরীক্ষা আটকে আছে তাঁদের পরীক্ষা গুলো নেওয়া হোক এবং বাকিদের একটা সঠিক রোডম্যাপ অনুযায়ী সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া হোক। সশরীরে পরীক্ষা দিলে উপস্থিতি ১০০ শতভাগ অসম্ভব কিছুই না। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা হলে ২০-৩০ ভাগ খুব চেষ্টা করেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাদের দায় কে নেবে? তাদের ক্যারিয়ার, তাদের ভবিষ্যতের কী হবে? তাই শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব প্রহসন বন্ধ করে সশরীরে অতিদ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাই।
আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রউফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর নির্দেশনা মোতাবেক দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণ করার তারিখ ঘোষণা করেছে। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে এখনও নীরব ভূমিকা শিক্ষার্থীদের চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। এমনিতেই দিনের-পর-দিন করোনার অজুহাত বেড়েই চলছে। সামনে আবার সামনে কোরবানীর ঈদ। তাই সবকিছু মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কোরবানির ঈদের আগেই যেন কমপক্ষে একটি সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পন্ন করা যায় সেই ভাবে প্রশাসনের পরীক্ষা গ্রহণ করার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পর্যন্ত পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাবো, অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী
অনিল মো. মোমিন বলেন, দেড় বছরেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া বা শিক্ষাক্ষতি উত্তরণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সেশনজট কমিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় বাঁচাতে দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া অতীব জরুরি। ইন্টারনেট গতির তলানীতে থাকায় অনলাইন ক্লাসই যেখানে শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি সেখানে অনলাইনে শতভাগ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া অসম্ভবই বলা যায়। যখন তখন বিদ্যুৎ বিভ্রাট, নেটওয়ার্ক সমস্যা ইত্যাদি লেগে তো আছেই। তাছাড়া অনেকের প্রয়োজনীয় ডিভাইস সংকট রয়েছে। ফলে ক্ষেত্রবিশেষ কিছুটা স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার বিকল্প নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুবিশাল ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়া কঠিন কোন বিষয় না। ইউজিসিও সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট স্বাস্থ্য সচেতন বলা যায়। করোনার মধ্যে এর আগে অনার্স ও মাস্টার্সের শেষ বর্ষের পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেয়া হয়েছিল। তখন কোন পরীক্ষার্থী করোনায় আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অনলাইন ও সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার মূল্যায়ণও অনেক তফাৎ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধা ও যথার্থ মূল্যায়নে দ্রুত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করে অতিসত্বর সশরীরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ ভিসি স্যার অসুস্থ এবং ঢাকায় অবস্থান করায় এবিষয়ে এখনও চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। চলতি মাসের ১৯ তারিখে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা রাখছি।